Skip to content
Home » Blog » দাঁত স্কেলিং: অপকারিতা ও অজানা ঝুঁকি জানুন

দাঁত স্কেলিং: অপকারিতা ও অজানা ঝুঁকি জানুন

দাঁত স্কেলিং: উপকারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিছু অপকারিতা

দাঁত স্কেলিং! নামটা শুনলেই কেমন যেন পরিষ্কার, ঝকঝকে দাঁতের ছবি ভেসে ওঠে, তাই না? ঢাকার ব্যস্ত জীবনযাত্রায়, যেখানে ফাস্ট ফুড আর মিষ্টির ছড়াছড়ি, সেখানে দাঁতের যত্ন নেওয়াটা যেন এক নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দাঁত স্কেলিং আমাদের কাছে এক দারুণ সমাধান হিসেবে ধরা দেয়। ভাবুন তো, দাঁতের হলদেটে আস্তরণ, যা দাঁত ব্রাশ করেও যায় না, সেটা এক নিমিষেই গায়েব! কিন্তু, এই যে এত সুবিধা, এর আড়ালে কি কোনো অসুবিধা লুকিয়ে থাকতে পারে?

হ্যাঁ, পারে তো বটেই! দাঁত স্কেলিং যেমন দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে এর কিছু অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। আজ আমরা সেই দিকগুলো নিয়েই কথা বলব – দাঁত স্কেলিং এর অপকারিতা। চলুন, একটু গভীরে ডুব দিই আর জেনে নিই, আপনার ঝকঝকে হাসির পেছনে কোনো লুকানো কষ্ট আছে কিনা।

Table of Contents

দাঁত স্কেলিং কী এবং কেন করা হয়?

দাঁত স্কেলিং হলো এক ধরনের ডেন্টাল ট্রিটমেন্ট, যেখানে দাঁতের ওপর জমে থাকা টারটার বা ক্যালকুলাস এবং প্লাক পরিষ্কার করা হয়। এই টারটার আর প্লাকগুলো আসলে ব্যাকটেরিয়া, খাবারের কণা আর লালার মিশ্রণ, যা সময়ের সাথে সাথে দাঁতের ওপর শক্ত আস্তরণ তৈরি করে। নিয়মিত ব্রাশ বা ফ্লসিং করেও এগুলো পুরোপুরি পরিষ্কার করা যায় না।

দাঁত স্কেলিং সাধারণত দুই ধরনের হয়:

  • ম্যানুয়াল স্কেলিং: এতে হাত দিয়ে বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে দাঁতের ওপর থেকে টারটার সরানো হয়।
  • আল্ট্রাসনিক স্কেলিং: এতে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে দাঁতের ওপর থেকে টারটার ভেঙে দেওয়া হয়।

কেন করা হয়?

দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে স্কেলিং খুবই জরুরি। এটি মাড়ির রোগ, ক্যাভিটি এবং মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। তবে, এই সব সুবিধার বাইরেও কিছু বিষয় আছে, যা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা উচিত।

দাঁত স্কেলিং এর সম্ভাব্য অপকারিতা

দাঁত স্কেলিং এর কিছু সাধারণ ভুল ধারণা আছে, যেমন – স্কেলিং করলে নাকি দাঁত নড়ে যায় বা ফাঁকা হয়ে যায়। এই ধারণাগুলোর পেছনে কিছু সত্যতা আছে, তবে তা সরাসরি স্কেলিং এর কারণে হয় না, বরং দাঁতের পূর্বাবস্থা বা ভুল প্রক্রিয়ার কারণে হতে পারে।

দাঁতের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি (Sensitivity)

দাঁত স্কেলিং এর পর অনেকেই দাঁতে এক ধরনের শিরশিরানি বা সংবেদনশীলতা অনুভব করেন। বিশেষ করে ঠান্ডা বা গরম কিছু খেলে এই সমস্যাটা বেড়ে যায়। এর কারণ কী?

আমাদের দাঁতের মূল অংশ ডেন্টিন (Dentin) নামে একটি স্তর দিয়ে আবৃত থাকে, যার ওপর এনামেল (Enamel) নামে একটি সুরক্ষামূলক আবরণ থাকে। যখন দাঁতের ওপর টারটার জমে থাকে, তখন এটি দাঁতের এনামেলকে ঢেকে রাখে। স্কেলিং এর মাধ্যমে টারটার সরে গেলে, দাঁতের এনামেল সরাসরি বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। এর ফলে দাঁতের ভেতরের নার্ভগুলো বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

  • কারণ: টারটার সরে গেলে দাঁতের এনামেল উন্মুক্ত হয়ে যায়।
  • সমাধান: সাধারণত এই সংবেদনশীলতা কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়। ডেন্টিস্ট সংবেদনশীলতা কমানোর জন্য বিশেষ টুথপেস্ট বা জেল ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।

মাড়ির রক্তপাত ও ব্যথা (Gum Bleeding and Pain)

স্কেলিং এর পর মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া বা মাড়িতে ব্যথা অনুভব করা খুবই স্বাভাবিক। অনেক সময় মনে হতে পারে, মাড়ি বুঝি কেটে গেছে। কিন্তু কেন এমন হয়?

যখন দাঁতের ওপর টারটার জমে, তখন মাড়িও এর দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং ইনফেকশন (Gingivitis) দেখা দেয়। মাড়ি তখন ফোলা ও লালচে হয়ে যায় এবং সহজেই রক্তপাত হয়। স্কেলিং এর সময় যখন এই টারটারগুলো অপসারণ করা হয়, তখন মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, কারণ মাড়ি তখনো ইনফেক্টেড থাকে।

  • কারণ: ইনফেক্টেড মাড়ি থেকে টারটার অপসারণের সময় রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক।
  • সমাধান: সঠিক ব্রাশ করার পদ্ধতি এবং ফ্লসিং এর মাধ্যমে মাড়ির স্বাস্থ্য উন্নত হলে এই সমস্যা কমে যায়। ডেন্টিস্টের পরামর্শ মেনে কিছু অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে।

দাঁতের এনামেলের ক্ষতি (Damage to Enamel)

অনেকে মনে করেন, দাঁত স্কেলিং করলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হয়। এই ধারণাটি কিছুটা ভুল। সঠিক পদ্ধতিতে স্কেলিং করলে এনামেলের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে, যদি ডেন্টিস্টের যন্ত্রের ব্যবহার ঠিক না হয় বা অতিরিক্ত ঘষাঘষি করা হয়, তাহলে এনামেলের ক্ষতি হতে পারে।

  • কারণ: অনভিজ্ঞ হাতে স্কেলিং করা হলে বা পুরনো যন্ত্র ব্যবহার করা হলে এনামেলের ক্ষতি হতে পারে।
  • সমাধান: সবসময় একজন অভিজ্ঞ ও রেজিস্টার্ড ডেন্টিস্টের কাছে স্কেলিং করানো উচিত।

দাঁতের ফাঁকা হওয়া বা নড়ে যাওয়া (Gap Formation or Loosening of Teeth)

এটি স্কেলিং এর একটি পরিচিত ভুল ধারণা। স্কেলিং করলে দাঁত ফাঁকা হয়ে যায় না বা নড়ে যায় না। বরং, টারটার দাঁতের গোড়ায় জমে দাঁতকে ধরে রাখে এমন একটা অনুভূতি দেয়। যখন এই টারটার সরে যায়, তখন সেই ফাঁকা জায়গাটা অনুভূত হয়। যদি মাড়ির রোগ (Periodontitis) খুব বেশি হয়ে থাকে এবং দাঁতের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়, তাহলে স্কেলিং এর পর দাঁত নড়ে যেতে পারে, কারণ টারটার তখন দাঁতের জন্য এক ধরনের সাপোর্ট হিসেবে কাজ করছিল।

  • কারণ: টারটার সরে গেলে দাঁতের ফাঁকা স্থান অনুভূত হয়, যা আগে টারটার দিয়ে ভরা ছিল।
  • সমাধান: নিয়মিত দাঁতের যত্ন এবং প্রয়োজনে ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো।

ইনফেকশনের ঝুঁকি (Risk of Infection)

বিরল ক্ষেত্রে, দাঁত স্কেলিং এর পর ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে এবং কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক পরিস্থিতিতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যাদের হার্টের সমস্যা আছে বা যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।

  • কারণ: মুখের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করলে।
  • সমাধান: ডেন্টিস্টকে আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। যদি প্রয়োজন হয়, ডেন্টিস্ট স্কেলিং এর আগে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন।

দাঁত স্কেলিং এর আগে ও পরে করণীয়

দাঁত স্কেলিং এর অপকারিতাগুলো যতটা সম্ভব এড়াতে কিছু পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী যত্ন নেওয়া জরুরি।

স্কেলিং এর আগে:

  1. ডেন্টিস্টের সাথে খোলামেলা কথা বলুন: আপনার মেডিকেল হিস্টোরি, বিশেষ করে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী রোগ থাকলে ডেন্টিস্টকে জানান।
  2. প্রশ্ন করুন: স্কেলিং প্রক্রিয়া, এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তী যত্ন সম্পর্কে জানতে চান।
  3. সঠিক ডেন্টিস্ট নির্বাচন: একজন অভিজ্ঞ এবং রেজিস্টার্ড ডেন্টিস্টের কাছে যান। তার ক্লিনিকের হাইজিন (Hygiene) নিশ্চিত করুন।

স্কেলিং এর পর:

  1. সংবেদনশীলতা কমানোর জন্য: ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সংবেদনশীলতা কমানোর টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। ঠান্ডা, গরম, মিষ্টি বা টক খাবার এড়িয়ে চলুন কয়েকদিন।
  2. নরম খাবার গ্রহণ: প্রথম কয়েকদিন নরম খাবার খান, যাতে মাড়িতে চাপ না পড়ে।
  3. সঠিক ব্রাশ ও ফ্লসিং: নরম ব্রাশ ব্যবহার করে আলতোভাবে দাঁত ব্রাশ করুন। ফ্লসিং করতে ভুলবেন না, তবে সাবধানে করুন।
  4. অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ: ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
  5. ধূমপান ও জর্দা পরিহার: স্কেলিং এর পর ধূমপান বা জর্দা পরিহার করুন, কারণ এগুলো মুখের প্রদাহ বাড়াতে পারে।
  6. নিয়মিত ফলো-আপ: ডেন্টিস্টের সাথে ফলো-আপ ভিজিট করুন, যাতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করা যায়।

দাঁত স্কেলিং: কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা বনাম বাস্তবতা

ভুল ধারণা বাস্তবতা
স্কেলিং করলে দাঁত নড়ে যায়। স্কেলিং করলে দাঁত নড়ে যায় না। বরং, দাঁতের গোড়ায় জমে থাকা টারটার সরে গেলে দাঁতের ফাঁকা অংশ অনুভূত হয়। যদি মাড়ির রোগ গুরুতর হয়, তবে টারটার সরে গেলে দাঁত নড়ে যেতে পারে, কারণ টারটার তখন একটি সাপোর্ট হিসেবে কাজ করছিল।
স্কেলিং করলে দাঁত ফাঁকা হয়ে যায়। টারটার দাঁতের ফাঁকা জায়গাগুলো ভরে রাখে। স্কেলিং এর পর সেই টারটার সরে গেলে ফাঁকা জায়গাগুলো দৃশ্যমান হয়, যা আগে থেকেই ছিল।
স্কেলিং করলে দাঁত দুর্বল হয়ে যায়। সঠিক পদ্ধতিতে স্কেলিং করলে দাঁত দুর্বল হয় না। বরং, টারটার জমে থাকলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে এবং দাঁত দুর্বল হতে পারে। স্কেলিং দাঁতকে পরিষ্কার ও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।
স্কেলিং এর ব্যথা অসহ্য। স্কেলিং এর সময় সাধারণত সামান্য অস্বস্তি বা হালকা ব্যথা হতে পারে, যা সহনীয়। যদি খুব বেশি সংবেদনশীলতা থাকে, তাহলে ডেন্টিস্ট লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া দিতে পারেন।
একবার স্কেলিং করলে বারবার করতে হয়। নিয়মিত মুখ ও দাঁতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে স্কেলিং এর প্রয়োজন কম হয়। তবে, বছরে অন্তত একবার স্কেলিং করানো উচিত দাঁতের সুস্বাস্থ্যের জন্য।
স্কেলিং এর পর দাঁত সাদা হয়। স্কেলিং এর মাধ্যমে দাঁতের ওপর থেকে টারটার ও দাগ পরিষ্কার করা হয়। এর ফলে দাঁতের স্বাভাবিক রঙ ফিরে আসে এবং দাঁত উজ্জ্বল দেখায়। তবে, এটি দাঁতকে ব্লিচিং এর মতো সাদা করে না।
গর্ভবতী অবস্থায় স্কেলিং করা নিরাপদ নয়। গর্ভবতী অবস্থায় স্কেলিং করা সাধারণত নিরাপদ। তবে, ডেন্টিস্টকে আপনার গর্ভাবস্থা সম্পর্কে জানানো উচিত, যাতে তিনি প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় মাড়ির প্রদাহ বেশি হতে পারে, তাই স্কেলিং এর প্রয়োজন হতে পারে।
বাচ্চাদের দাঁত স্কেলিং এর প্রয়োজন হয় না। বাচ্চাদেরও দাঁতে টারটার জমতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা ঠিকমতো ব্রাশ না করে। এক্ষেত্রে বাচ্চাদেরও স্কেলিং এর প্রয়োজন হতে পারে। তবে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত কম আক্রমণাত্মক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
স্কেলিং করলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হয়। আধুনিক স্কেলিং পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের হাতে স্কেলিং করলে দাঁতের এনামেলের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং, টারটার দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে।
স্কেলিং এর পর দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে। টারটার সরে যাওয়ার কারণে দাঁতের ফাঁকা জায়গাগুলো দৃশ্যমান হয়, যেখানে আগে টারটার জমে থাকত। এই ফাঁকা জায়গায় খাবার জমার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ফ্লসিং এবং ডেন্টিস্টের পরামর্শে ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করলে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

দাঁত স্কেলিং কি সবার জন্য জরুরি?

না, দাঁত স্কেলিং সবার জন্য জরুরি নয়, তবে বেশিরভাগ মানুষেরই দাঁতে প্লাক ও টারটার জমে। যাদের দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো এবং যারা নিয়মিত সঠিক উপায়ে ব্রাশ ও ফ্লসিং করেন, তাদের ক্ষেত্রে টারটার জমার প্রবণতা কম থাকে। তবে, বেশিরভাগ মানুষই সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন না, ফলে টারটার জমে যায়। তাই, বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করানো এবং প্রয়োজনে স্কেলিং করানো উচিত।

দাঁত স্কেলিং এর বিকল্প কি আছে?

দাঁত স্কেলিং এর সরাসরি কোনো বিকল্প নেই, কারণ এটি দাঁতের ওপর জমে থাকা শক্ত টারটার অপসারণের একমাত্র কার্যকর উপায়। তবে, টারটার জমা রোধ করতে এবং মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন:

  • নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লসিং: দিনে দুবার ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করুন এবং প্রতিদিন একবার ফ্লসিং করুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করুন।
  • নিয়মিত ডেন্টাল চেক-আপ: বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে যান।

স্কেলিং এর পর দাঁতের যত্ন: কিছু টিপস

  • প্রথম ২৪ ঘণ্টা ধূমপান, জর্দা, পান, চা, কফি এবং রঙিন খাবার (যেমন- বিট, হলুদ) এড়িয়ে চলুন।
  • কয়েকদিন ঠান্ডা বা গরম খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সংবেদনশীলতা কমানোর টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
  • প্রথম কয়েকদিন নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করুন।
  • নিয়মিত ফ্লসিং করুন, তবে সাবধানে।
  • যদি রক্তপাত বা ব্যথা অব্যাহত থাকে, তবে দ্রুত ডেন্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।

উপসংহার

দাঁত স্কেলিং এর অপকারিতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমরা দেখলাম, এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও, সেগুলো সাধারণত সাময়িক এবং সঠিক যত্ন নিলে তা এড়ানো যায়। স্কেলিং এর মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার দাঁতকে সুস্থ ও পরিষ্কার রাখা, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখবেন, মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে শুধু হাসিই সুন্দর হয় না, বরং পুরো শরীরও সুস্থ থাকে। তাই, দাঁত স্কেলিং এর আগে ভয় না পেয়ে, একজন অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন। আপনার ডেন্টিস্টই আপনাকে সবচেয়ে ভালো গাইড করতে পারবেন।

আপনার দাঁতের যত্ন নিন, হাসি থাকুক উজ্জ্বল!

Key Takeaways

  • সংবেদনশীলতা স্বাভাবিক: স্কেলিং এর পর দাঁতে শিরশিরানি বা সংবেদনশীলতা অনুভব করা স্বাভাবিক, যা সাধারণত সাময়িক।
  • রক্তপাত ও ব্যথা: মাড়ির ইনফেকশনের কারণে স্কেলিং এর পর মাড়ি থেকে রক্তপাত বা ব্যথা হতে পারে, যা সঠিক যত্নে সেরে যায়।
  • এনামেলের ক্ষতি নয়: সঠিক পদ্ধতিতে স্কেলিং করলে দাঁতের এনামেলের কোনো ক্ষতি হয় না।
  • দাঁত নড়ে না: স্কেলিং এর কারণে দাঁত নড়ে যায় না বা ফাঁকা হয় না; টারটার সরে গেলে ফাঁকা অংশ অনুভূত হয়।
  • ইনফেকশনের ঝুঁকি বিরল: বিরল ক্ষেত্রে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকলেও, এটি ডেন্টিস্টের কাছে আপনার মেডিকেল হিস্টোরি জানানোর মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।
  • নিয়মিত যত্ন জরুরি: স্কেলিং এর পর দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া এবং নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে ফলো-আপ করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • সঠিক ডেন্টিস্ট নির্বাচন: সবসময় একজন অভিজ্ঞ ও রেজিস্টার্ড ডেন্টিস্টের কাছে স্কেলিং করান।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

১. দাঁত স্কেলিং এর পর দাঁত শিরশির করে কেন?

দাঁত স্কেলিং এর পর দাঁত শিরশির করার প্রধান কারণ হলো দাঁতের ওপর জমে থাকা টারটার সরে গেলে এনামেলের নিচের ডেন্টিন স্তরটি উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই ডেন্টিনে অসংখ্য ছোট ছোট নালি থাকে যা দাঁতের ভেতরের নার্ভের সাথে যুক্ত। ঠান্ডা, গরম, মিষ্টি বা টক যখন এই উন্মুক্ত ডেন্টিনের সংস্পর্শে আসে, তখন নার্ভগুলো উদ্দীপিত হয় এবং শিরশিরানি বা সংবেদনশীলতা অনুভূত হয়। এটি সাধারণত কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়।

২. দাঁত স্কেলিং এর পর মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া কি স্বাভাবিক?

হ্যাঁ, দাঁত স্কেলিং এর পর মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এর কারণ হলো, যখন দাঁতের ওপর টারটার জমে থাকে, তখন মাড়িতে প্রদাহ বা ইনফেকশন (Gingivitis) হয়। এই ইনফেকশনের কারণে মাড়ি ফোলা এবং স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। স্কেলিং এর সময় যখন এই টারটারগুলো অপসারণ করা হয়, তখন ইনফেক্টেড মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। এটি মাড়ির স্বাস্থ্যের উন্নতির একটি অংশ এবং সাধারণত কিছুদিনের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।

৩. স্কেলিং করলে কি দাঁত ফাঁকা হয়ে যায় বা নড়ে যায়?

না, স্কেলিং করলে দাঁত ফাঁকা হয়ে যায় না বা নড়ে যায় না। এটি একটি ভুল ধারণা। টারটার দাঁতের গোড়ায় জমে দাঁতকে ধরে রাখে এমন একটা অনুভূতি দেয়, বিশেষ করে যদি মাড়ির রোগ গুরুতর হয়। যখন এই টারটার স্কেলিং এর মাধ্যমে অপসারণ করা হয়, তখন দাঁতের ফাঁকা স্থানগুলো দৃশ্যমান হয়, যা আগে টারটার দিয়ে ভরা ছিল। যদি মাড়ির রোগ (Periodontitis) খুব বেশি হয়ে দাঁতের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়, তবে স্কেলিং এর পর দাঁত নড়তে পারে, কারণ তখন টারটার দাঁতের জন্য এক ধরনের সাপোর্ট হিসেবে কাজ করছিল।

৪. কতদিন পর পর দাঁত স্কেলিং করা উচিত?

সাধারণত, একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির বছরে অন্তত একবার দাঁত স্কেলিং করানো উচিত। তবে, যদি আপনার দাঁতে দ্রুত টারটার জমে বা মাড়ির সমস্যা থাকে, তাহলে ডেন্টিস্ট ছয় মাস পর পর স্কেলিং করার পরামর্শ দিতে পারেন। আপনার ডেন্টিস্ট আপনার দাঁতের অবস্থা দেখে সবচেয়ে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন।

৫. দাঁত স্কেলিং এর পর কি কোনো বিশেষ খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলতে হয়?

হ্যাঁ, দাঁত স্কেলিং এর পর প্রথম ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কিছু খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা ভালো। বিশেষ করে, খুব ঠান্ডা বা খুব গরম খাবার ও পানীয় পরিহার করুন, কারণ দাঁত সংবেদনশীল থাকতে পারে। এছাড়া, চা, কফি, লাল ওয়াইন, বিট বা হলুদ জাতীয় রঙিন খাবার, এবং ধূমপান ও জর্দা পরিহার করুন, কারণ এগুলো দাঁতে দাগ ফেলতে পারে এবং মাড়ির প্রদাহ বাড়াতে পারে। মিষ্টি ও টক খাবারও প্রথম কয়েকদিন এড়িয়ে চলা উচিত।