Skip to content
Home » Blog » দাঁত স্কেলিং: সহজ পদ্ধতি ও উপকারিতা

দাঁত স্কেলিং: সহজ পদ্ধতি ও উপকারিতা

দাঁত স্কেলিং কিভাবে করে – এই প্রশ্নটা আপনার মনে এসেছে মানে আপনি আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ সচেতন। আর সচেতনতাটাই আসল! দাঁতের যত্ন নেওয়া মানে শুধু ব্রাশ করা আর কুলি করা নয়, এর থেকেও অনেক বেশি কিছু। আমাদের মুখে প্রতিদিন যে খাবার খাই, তার কিছু অংশ দাঁতের ফাঁকে জমে শক্ত পাথরের মতো হয়ে যায়, যাকে আমরা ডেন্টাল প্লাক বা টারটার বলি। এই টারটারগুলো কিন্তু সাধারণ ব্রাশ করে পরিষ্কার করা যায় না। আর এখানেই আসে দাঁত স্কেলিংয়ের গুরুত্ব।

আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রিয় খাবারগুলো যখন দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে দুর্গন্ধ তৈরি করে, তখন কেমন লাগে? অথবা যখন হাসতে গিয়ে হলদেটে দাঁত দেখে অস্বস্তি হয়? এই সবকিছুর সমাধান হতে পারে দাঁত স্কেলিং। চলুন, জেনে নিই দাঁত স্কেলিং আসলে কী, কেন এটা জরুরি আর কিভাবে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

Table of Contents

মূল বিষয়বস্তু (Key Takeaways)

  • দাঁত স্কেলিং হলো দাঁত এবং মাড়ির নিচের অংশ থেকে ডেন্টাল প্লাক ও টারটার পরিষ্কার করার একটি প্রক্রিয়া।
  • এটি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ এবং মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • সাধারণত বছরে একবার বা দুইবার স্কেলিং করানো উচিত, তবে এটি দাঁতের অবস্থার ওপর নির্ভর করে।
  • স্কেলিংয়ের প্রক্রিয়াটি সাধারণত ব্যথাহীন, তবে সংবেদনশীলতা থাকলে কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে।
  • সঠিক টুথব্রাশিং এবং ফ্লসিংয়ের মাধ্যমে স্কেলিংয়ের কার্যকারিতা বাড়ানো যায়।

দাঁত স্কেলিং কী এবং কেন এটি জরুরি?

দাঁত স্কেলিং হলো একটি পেশাদার দাঁত পরিষ্কারের পদ্ধতি। এর মাধ্যমে দাঁতের উপরিভাগ এবং মাড়ির নিচের অংশে জমে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফেট এবং বিভিন্ন খাদ্য কণা থেকে তৈরি হওয়া শক্ত আবরণ, যাকে টারটার (Tartar) বা ক্যালকুলাস (Calculus) বলা হয়, তা অপসারণ করা হয়। আমাদের প্রতিদিনের ব্রাশ এবং ফ্লসিংয়ের পরেও কিছু জায়গায় এই প্লাক বা টারটার জমে যেতে পারে, যা খালি চোখে দেখা কঠিন।

কেন স্কেলিং জরুরি?

আপনি হয়তো ভাবছেন, “আমি তো প্রতিদিন ব্রাশ করি, তাহলে স্কেলিংয়ের কী দরকার?” আপনার এই প্রশ্নটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্রাশ আর ফ্লসিং দিয়ে দাঁতের সব কোণা থেকে প্লাক দূর করা সম্ভব হয় না। সময়ের সাথে সাথে এই প্লাকগুলো জমে জমে টারটারে পরিণত হয়। আর এই টারটারগুলোই যত বিপত্তির মূল:

  • মাড়ির রোগ (Gum Disease): টারটার মাড়ির প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা জিনজিভাইটিস (Gingivitis) নামে পরিচিত। এর ফলে মাড়ি ফুলে যায়, লালচে হয় এবং রক্তপাত হতে পারে। যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি পেরিওডনটাইটিস (Periodontitis) নামক আরও গুরুতর মাড়ির রোগে রূপ নিতে পারে, যা দাঁত হারানোর কারণ হতে পারে।
  • দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay): টারটারের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করে দেয় এবং দাঁতে গর্ত বা ক্যাভিটি তৈরি করে।
  • মুখের দুর্গন্ধ (Bad Breath): জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং খাদ্য কণা পচে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে, যা আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে।
  • দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া: টারটার দাঁতের ওপর হলদেটে বা বাদামী রঙের আস্তরণ তৈরি করে, যা আপনার হাসির সৌন্দর্য নষ্ট করে।

সুতরাং, স্কেলিং শুধু আপনার দাঁত পরিষ্কার রাখে না, বরং এটি আপনার সামগ্রিক মুখের স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

দাঁত স্কেলিং কিভাবে করে: ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া

দাঁত স্কেলিংয়ের প্রক্রিয়াটি সাধারণত একজন ডেন্টিস্ট বা ডেন্টাল হাইজিনিস্ট দ্বারা সম্পন্ন হয়। এটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়, যা আপনার দাঁতের অবস্থা এবং টারটারের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।

১. প্রাথমিক পরীক্ষা এবং প্রস্তুতি

যখন আপনি ডেন্টিস্টের কাছে যাবেন, তিনি প্রথমে আপনার দাঁত এবং মাড়ি ভালোভাবে পরীক্ষা করবেন। তিনি দেখবেন কোথায় টারটার জমেছে, মাড়ির অবস্থা কেমন, এবং কোনো প্রদাহ আছে কিনা। অনেক সময় এক্স-রে করার প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে যদি মাড়ির ভেতরের অবস্থা জানার দরকার হয়।

  • মুখের স্বাস্থ্য মূল্যায়ন: ডেন্টিস্ট আপনার মুখের ভেতরের অংশ, বিশেষ করে দাঁত ও মাড়ির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন।
  • টারটার সনাক্তকরণ: তিনি একটি ছোট আয়না এবং প্রোব (Probe) ব্যবহার করে টারটারের অবস্থান এবং পরিমাণ চিহ্নিত করবেন।

যদি আপনার দাঁত খুব বেশি সংবেদনশীল হয় বা মাড়িতে বেশি প্রদাহ থাকে, তাহলে ডেন্টিস্ট সাময়িকভাবে মাড়ি অবশ করার জন্য টপিক্যাল অ্যানেস্থেসিয়া (Topical Anesthesia) ব্যবহার করতে পারেন, যাতে স্কেলিংয়ের সময় আপনি কোনো ব্যথা অনুভব না করেন।

২. স্কেলিং প্রক্রিয়া

দাঁত স্কেলিং সাধারণত দুটি প্রধান পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়: ম্যানুয়াল স্কেলিং এবং আল্ট্রাসনিক স্কেলিং। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ডেন্টিস্টরা উভয় পদ্ধতিই ব্যবহার করেন, যা আপনার দাঁতের অবস্থার ওপর নির্ভর করে।

২.১. আল্ট্রাসনিক স্কেলিং (Ultrasonic Scaling)

এটি বর্তমানে সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ (High-frequency sound vibrations) উৎপন্ন করে।

  • যন্ত্রের ব্যবহার: আল্ট্রাসনিক স্কেলার নামক যন্ত্রের একটি ছোট মেটালিক টিপ থাকে, যা দ্রুত কম্পন তৈরি করে।
  • কার্যপদ্ধতি: এই কম্পনগুলো টারটারকে দাঁতের পৃষ্ঠ থেকে আলগা করে দেয়। একই সাথে, যন্ত্র থেকে জলের ফোয়ারা বের হয়, যা আলগা হওয়া টারটার এবং ধ্বংসাবশেষ ধুয়ে ফেলে। এই জল দাঁত ঠান্ডা রাখতে এবং পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে।
  • সুবিধা: এই পদ্ধতি দ্রুত এবং কম সময়ে বেশি টারটার অপসারণ করতে পারে। এটি বিশেষ করে দাঁতের ফাঁকে এবং মাড়ির নিচের অংশে জমে থাকা টারটারের জন্য খুব কার্যকর।

২.২. ম্যানুয়াল স্কেলিং (Manual Scaling)

আল্ট্রাসনিক স্কেলিংয়ের পর ডেন্টিস্ট ম্যানুয়াল স্কেলিং টুলস ব্যবহার করতে পারেন, যা টারটারের ছোট ছোট অংশ বা স্পর্শকাতর জায়গা থেকে টারটার অপসারণের জন্য ব্যবহার করা হয়।

  • সরঞ্জাম: ডেন্টিস্টরা বিভিন্ন আকারের কিউরেট (Curette) এবং সিকেল স্কেলার (Sickle Scaler) ব্যবহার করেন।
  • কার্যপদ্ধতি: এই তীক্ষ্ণ যন্ত্রগুলো দিয়ে ডেন্টিস্ট দাঁতের পৃষ্ঠ থেকে লেগে থাকা টারটার সাবধানে তুলে ফেলেন। এটি বিশেষ করে দাঁতের গোড়ায় এবং মাড়ির পকেটে জমে থাকা টারটারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • সুবিধা: ম্যানুয়াল স্কেলিং ডেন্টিস্টকে আরও সূক্ষ্মভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়, যা আল্ট্রাসনিক স্কেলারের পক্ষে সম্ভব নয়।

৩. রুট প্ল্যানিং (Root Planing)

যদি মাড়ির রোগ গুরুতর হয় এবং টারটার মাড়ির গভীরে, অর্থাৎ দাঁতের গোড়ায় জমে যায়, তাহলে ডেন্টিস্ট রুট প্ল্যানিং করার পরামর্শ দিতে পারেন।

  • উদ্দেশ্য: রুট প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে দাঁতের গোড়ার পৃষ্ঠকে মসৃণ করা হয়। এতে ব্যাকটেরিয়া এবং টারটার সহজে আবার জমতে পারে না।
  • কার্যপদ্ধতি: এটি স্কেলিংয়েরই একটি বর্ধিত অংশ, যেখানে দাঁতের গোড়ার অমসৃণ অংশগুলো মসৃণ করা হয়।

৪. পলিশিং (Polishing)

স্কেলিং এবং রুট প্ল্যানিং শেষ হওয়ার পর দাঁতগুলোকে পলিশ করা হয়।

  • উপকরণ: একটি বিশেষ পেস্ট এবং ঘোরানো রাবার কাপ ব্যবহার করে দাঁতের উপরিভাগ মসৃণ করা হয়।
  • উদ্দেশ্য: পলিশিং দাঁতের পৃষ্ঠকে মসৃণ করে তোলে, যা ভবিষ্যতে প্লাক এবং টারটার জমতে বাধা দেয়। এটি দাঁতের ওপরের ছোট ছোট দাগও দূর করে দাঁতকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

৫. ফ্লুরাইড ট্রিটমেন্ট (Fluoride Treatment)

কিছু ক্ষেত্রে, ডেন্টিস্ট স্কেলিংয়ের পর ফ্লুরাইড ট্রিটমেন্টের পরামর্শ দিতে পারেন।

  • উদ্দেশ্য: ফ্লুরাইড দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করে এবং দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে।
  • কার্যপদ্ধতি: ফ্লুরাইড জেল বা ফোম দাঁতের ওপর কিছুক্ষণ রেখে দেওয়া হয়।

পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা সময় নেয়, তবে এটি আপনার দাঁতের অবস্থা এবং টারটারের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।

স্কেলিংয়ের পর দাঁতের যত্ন এবং করণীয়

স্কেলিংয়ের পর আপনার দাঁত এবং মাড়ি কিছুটা সংবেদনশীল হতে পারে। এই সময়ে সঠিক যত্ন নেওয়া খুব জরুরি।

৪.১. স্কেলিংয়ের পর সম্ভাব্য অনুভূতি

  • সংবেদনশীলতা: অনেক সময় স্কেলিংয়ের পর দাঁত ঠান্ডা বা গরমের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনার মাড়ি আগে থেকেই সংকুচিত হয়ে থাকে। এটি সাধারণত কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়।
  • মাড়ি থেকে রক্তপাত: স্কেলিংয়ের পর মাড়ি থেকে সামান্য রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনার মাড়িতে আগে থেকেই প্রদাহ থাকে। এটি সাধারণত একদিনের মধ্যে কমে যায়।
  • সামান্য ব্যথা বা অস্বস্তি: কিছু মানুষ স্কেলিংয়ের পর সামান্য ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন, যা সাধারণ ব্যথানাশক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪.২. স্কেলিংয়ের পর করণীয়

  • নরম খাবার: স্কেলিংয়ের পর প্রথম কয়েকদিন নরম খাবার খান। খুব বেশি ঠান্ডা, গরম, মশলাযুক্ত বা অ্যাসিডিক খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • সঠিক ব্রাশ এবং ফ্লসিং: নিয়মিত দিনে দু’বার নরম ব্রিসেলের ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন এবং প্রতিদিন ফ্লসিং করুন। এতে প্লাক জমতে পারবে না।
  • অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ: ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন, যা মাড়ির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
  • ফ্লুরাইড টুথপেস্ট: সংবেদনশীলতা কমাতে ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
  • ধূমপান এবং তামাক পরিহার: ধূমপান এবং তামাক মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্কেলিংয়ের পর এগুলো পরিহার করুন।
  • পরবর্তী ফলো-আপ: ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফলো-আপে যান।

দাঁত স্কেলিং নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

দাঁত স্কেলিং নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা দূর করা দরকার।

১. দাঁত স্কেলিং করলে দাঁত ফাঁকা হয়ে যায়

এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্কেলিংয়ের ফলে দাঁত ফাঁকা হয় না। বরং, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা টারটারগুলো যখন স্কেলিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়, তখন আপনার মনে হতে পারে যে দাঁতগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। আসলে এটি টারটারের স্থান, যা আপনার দাঁতের ফাঁকে ভরে ছিল। টারটার অপসারণের পর সেই স্থানটি খালি মনে হয়।

২. দাঁত স্কেলিং করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যায়

এটিও একটি ভুল ধারণা। আধুনিক স্কেলিং পদ্ধতি এবং যন্ত্রগুলো দাঁতের এনামেলের কোনো ক্ষতি করে না। ডেন্টিস্টরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এই কাজটি করেন, যাতে দাঁতের কোনো ক্ষতি না হয়। বরং, টারটার জমে থাকলে দাঁতের এনামেলই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. দাঁত স্কেলিং খুব ব্যথাযুক্ত একটি প্রক্রিয়া

বেশিরভাগ মানুষের জন্য দাঁত স্কেলিং একটি ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। তবে, যদি আপনার মাড়ি খুব বেশি সংবেদনশীল হয় বা মাড়িতে গুরুতর প্রদাহ থাকে, তাহলে কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট স্থানীয় অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করে প্রক্রিয়াটি আরামদায়ক করে তুলতে পারেন।

৪. একবার স্কেলিং করলে বারবার করতে হয়

দাঁত স্কেলিং একটি নিয়মিত দাঁত পরিষ্কারের প্রক্রিয়া, যেমন আপনি নিয়মিত ব্রাশ করেন। আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে বছরে একবার বা দু’বার স্কেলিং করানো উচিত। এটি আপনার দাঁতকে সুস্থ এবং রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

কখন দাঁত স্কেলিং করাবেন?

আপনি যদি নিচের লক্ষণগুলো অনুভব করেন, তাহলে দাঁত স্কেলিং করানোর কথা ভাবতে পারেন:

  • দাঁতে হলদেটে বা বাদামী আস্তরণ: যদি আপনার দাঁতে শক্ত, হলদেটে বা বাদামী রঙের আস্তরণ দেখতে পান, যা ব্রাশ করে পরিষ্কার হয় না।
  • মাড়ি থেকে রক্তপাত: দাঁত ব্রাশ করার সময় বা এমনিতেই যদি মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়।
  • ফুলে যাওয়া বা লালচে মাড়ি: যদি আপনার মাড়ি ফুলে যায়, লালচে দেখায় বা স্পর্শ করলে ব্যথা করে।
  • মুখের দুর্গন্ধ: যদি আপনার মুখে দীর্ঘস্থায়ী দুর্গন্ধ থাকে, যা ব্রাশ বা মাউথওয়াশ দিয়েও দূর হয় না।
  • দাঁতের সংবেদনশীলতা: যদি আপনার দাঁত ঠান্ডা বা গরমের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়।

সাধারণত, ডেন্টিস্টরা বছরে একবার বা দু’বার নিয়মিত দাঁত স্কেলিং করানোর পরামর্শ দেন, এমনকি যদি আপনার উপরের কোনো লক্ষণ নাও থাকে। এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে এবং আপনার দাঁতকে সুস্থ রাখে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১. দাঁত স্কেলিং কি দাঁত সাদা করে?

দাঁত স্কেলিং সরাসরি দাঁতকে সাদা করে না, তবে এটি দাঁতের উপরিভাগে জমে থাকা টারটার এবং দাগ দূর করে দাঁতকে তার প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এর ফলে দাঁত অনেক পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল দেখায়। দাঁত সাদা করার জন্য ব্লিচিং বা হোয়াইটেনিং ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হয়।

২. দাঁত স্কেলিংয়ের পর কি কিছু নিয়ম মানতে হয়?

হ্যাঁ, স্কেলিংয়ের পর প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টা কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন: খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা, নরম খাবার খাওয়া, এবং রঙিন পানীয় যেমন চা, কফি, কোলা বা ওয়াইন (যদি পান করেন) পরিহার করা। এছাড়াও, ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লসিং করা অত্যন্ত জরুরি।

৩. দাঁত স্কেলিং কতক্ষণ লাগে?

দাঁত স্কেলিংয়ের সময়কাল নির্ভর করে আপনার দাঁতে কতটা টারটার জমেছে এবং আপনার মাড়ির অবস্থার ওপর। সাধারণত, এটি ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে। যদি মাড়ির রোগ গুরুতর হয় এবং রুট প্ল্যানিংয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে।

৪. দাঁত স্কেলিংয়ের খরচ কেমন?

দাঁত স্কেলিংয়ের খরচ স্থান, ডেন্টিস্টের অভিজ্ঞতা এবং আপনার দাঁতের অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত একটি স্কেলিং সেশনের খরচ ১০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। রুট প্ল্যানিংয়ের প্রয়োজন হলে খরচ বাড়তে পারে।

৫. গর্ভবতী অবস্থায় কি দাঁত স্কেলিং করানো যায়?

হ্যাঁ, গর্ভবতী অবস্থায় দাঁত স্কেলিং করানো নিরাপদ। প্রকৃতপক্ষে, গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মাড়ির রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই, গর্ভবতী মহিলাদের মৌখিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা আরও জরুরি। তবে, যেকোনো চিকিৎসার আগে আপনার ডেন্টিস্ট এবং গাইনেকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।

উপসংহার

দাঁত স্কেলিং একটি অত্যাবশ্যকীয় মৌখিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রক্রিয়া, যা আপনার দাঁত এবং মাড়িকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি কেবল আপনার হাসিকেই উজ্জ্বল করে না, বরং মাড়ির রোগ, দাঁতের ক্ষয় এবং মুখের দুর্গন্ধের মতো গুরুতর সমস্যা থেকেও আপনাকে রক্ষা করে। নিয়মিত দাঁত স্কেলিং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সুতরাং, আর দেরি কেন? যদি আপনি আপনার দাঁতে টারটার জমে থাকতে দেখেন, মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়, বা মুখে দুর্গন্ধ অনুভব করেন, তাহলে আজই আপনার ডেন্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন এবং দাঁত স্কেলিংয়ের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন। আপনার দাঁতের যত্ন নিন, আপনার হাসি উজ্জ্বল থাকুক!