Skip to content
Home » Blog » স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কি? – A Complete Guide

স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কি? – A Complete Guide

আচ্ছা, ধরুন আপনি গ্রামে থাকেন। হঠাৎ করে দেখলেন একজন আপা বা ভাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন, বাচ্চাদের টিকা দিচ্ছেন, আবার কোনো সমস্যায় প্রাথমিক চিকিৎসাটাও দিচ্ছেন। এরা কারা, জানেন তো? এরা হলেন স্বাস্থ্য সহকারী। চলুন, আজকের ব্লগ পোষ্টে জেনে নিই একজন স্বাস্থ্য সহকারী কী কী কাজ করেন এবং আমাদের স্বাস্থ্যখাতে তাদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

Table of Contents

স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কি? – A Complete Guide

স্বাস্থ্য সহকারী হলেন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একদম তৃণমূল স্তরের কর্মী। তারা মূলত জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেন। স্বাস্থ্যখাতে তাদের অবদান অনেক। তারা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করেন এবং সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আজকের ব্লগ পোষ্টে আমরা স্বাস্থ্য সহকারীদের মূল দায়িত্ব, মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগকালীন সময়ে তাদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

১. স্বাস্থ্য সহকারীর মূল দায়িত্ব (Main Responsibilities of a Health Assistant)

স্বাস্থ্য সহকারীর প্রধান কাজ হলো স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাদের কাজের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। নিচে তাদের প্রধান কিছু কাজ আলোচনা করা হলো:

  • স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করা।
  • টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করা।
  • রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সাহায্য করা।

১.১ স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি (Creating Health Awareness)

স্বাস্থ্য সহকারীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করা। তারা মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার গুরুত্ব বোঝান। এছাড়া, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কেও তারা ধারণা দিয়ে থাকেন।

  • ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে কি কি করতে হবে, যেমন – খাবার আগে হাত ধোয়া, পরিষ্কার জল পান করা ইত্যাদি, সে সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপকারিতা, যেমন – টাটকা ফল ও সবজি খাওয়া, ফাস্ট ফুড পরিহার করা ইত্যাদি বুঝিয়ে বলা।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে জানানো।

স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে রোগের হার অনেক কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য সহকারীদের প্রচারণার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ আগের চেয়ে অনেক কমেছে।

১.২ টিকাদান কর্মসূচি (Vaccination Programs)

স্বাস্থ্য সহকারীরা শিশুদের এবং বড়দের জন্য টিকাদানের ব্যবস্থা করেন। তারা টিকা দেওয়ার সঠিক সময় ও গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে জানান। টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ কিভাবে সম্ভব, সেই বিষয়েও তারা ব্যাখ্যা করেন।

  • পোলিও, হাম, রুবেলা, টিটেনাস ইত্যাদি রোগের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং মানুষকে উৎসাহিত করা।
  • টিকা দেওয়ার পরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে কি করতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।
  • টিকাদানের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য বিভিন্ন সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা।

টিকাদানের ফলে অনেক মারাত্মক রোগের প্রকোপ কমে গেছে। যেমন, পোলিও প্রায় নির্মূলের পথে, যার পেছনে টিকাদান কর্মসূচির বিশাল অবদান রয়েছে।

১.৩ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (Disease Control and Prevention)

স্বাস্থ্য সহকারীরা বিভিন্ন রোগ যেমন – ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, যক্ষ্মা ইত্যাদি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেন। তারা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কেও জানান, যাতে মানুষ দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারে। এছাড়া, রোগ ছড়িয়ে পড়া থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, সেই বিষয়েও তারা পরামর্শ দেন।

  • ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে বাড়ির আশেপাশে জল জমতে না দেওয়া, মশার কয়েল ব্যবহার করা, এবং মশারি টাঙানো ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।
  • যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ (যেমন – একটানা কাশি, জ্বর, ওজন কমে যাওয়া) সম্পর্কে মানুষকে জানানো এবং দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে উৎসাহিত করা।
  • ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য মশারী ব্যবহার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেওয়া।

রোগ প্রতিরোধের ফলে স্বাস্থ্যখাতে অনেক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে এবং রোগের কারণে হওয়া আর্থিক ক্ষতিও কমে গেছে।

২. মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম (Field Level Activities)

স্বাস্থ্য সহকারীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে তাদের সরাসরি সংযোগ থাকে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন, তথ্য সংগ্রহ করেন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক জরিপ পরিচালনা করেন।

২.১ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা প্রদান (Door-to-Door Services)

স্বাস্থ্য সহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেন। তারা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও ঔষধ সরবরাহ করেন। এছাড়া, গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।

ধরুন, একজন স্বাস্থ্য সহকারী প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন, তাদের প্রয়োজনীয় ভিটামিন দিচ্ছেন এবং প্রসবের সময় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। এর ফলে অনেক মায়ের জীবন বাঁচে এবং সুস্থ সন্তান জন্ম নেয়।

২.২ তথ্য সংগ্রহ ও জরিপ (Data Collection and Surveys)

স্বাস্থ্য সহকারীরা এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ও কারণ খুঁজে বের করেন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক জরিপ পরিচালনা করে সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠান। এই তথ্য সরকারের স্বাস্থ্য পরিকল্পনা তৈরিতে কাজে লাগে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি এলাকার স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের একটি নমুনা নিচে দেওয়া হলো:

বিষয় পরিমাণ
জনসংখ্যা ২০,০০০
ডায়রিয়া রোগী ৩০০
টিকাদান ৯৫%
মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২ জন

এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।

২.৩ স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও সচেতনতা কার্যক্রম (Health Camps and Awareness Programs)

স্বাস্থ্য সহকারীরা গ্রাম বা মহল্লায় স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন করেন। সেখানে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, স্বাস্থ্য বিষয়ক নাটক, গান, বা আলোচনা সভার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হয়।

একটি স্বাস্থ্য ক্যাম্পের ছবি কল্পনা করুন, যেখানে স্বাস্থ্য সহকারীরা মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, রোগ সম্পর্কে সচেতন করছেন এবং বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ করছেন।

৩. মা ও শিশু স্বাস্থ্য (Mother and Child Health)

মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সহকারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিভিন্ন সেবা প্রদান করেন এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করেন।

৩.১ প্রসবপূর্ব ও প্রসবপরবর্তী যত্ন (Antenatal and Postnatal Care)

স্বাস্থ্য সহকারীরা গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। প্রসবের সময় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তা জানান। এছাড়া, প্রসবের পর মা ও শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হবে, সেই বিষয়েও তারা পরামর্শ দেন।

গর্ভবতী অবস্থায় কি খাবার খাওয়া উচিত (যেমন – প্রচুর ফল, সবজি, প্রোটিন) এবং কি করা উচিত নয় (যেমন – ধূমপান, মদ্যপান), সে বিষয়ে তারা বিস্তারিত জানান।

৩.২ নবজাতকের যত্ন ও টিকাদান (Newborn Care and Vaccination)

স্বাস্থ্য সহকারীরা নবজাতকের সঠিক পরিচর্যা সম্পর্কে ধারণা দেন। জন্মের পর নবজাতককে কি কি টিকা দিতে হবে, তা জানান। এছাড়া, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় সম্পর্কেও তারা পরামর্শ দেন।

নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় টিকার তালিকা ও সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো:

টিকার নাম দেওয়ার সময়
বিসিজি জন্মের পর
পোলিও ৬ সপ্তাহ
পেন্টা ৬ সপ্তাহ
রুবেলা ৯ মাস

৩.৩ পরিবার পরিকল্পনা (Family Planning)

স্বাস্থ্য সহকারীরা পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেন। ছোট পরিবারের সুবিধা সম্পর্কে মানুষকে জানান এবং পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দেন।

কন্ডম, পিল, ইনজেকশন ইত্যাদি ব্যবহার করার নিয়ম এবং সুবিধা সম্পর্কে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেন।

৪. দুর্যোগকালীন ভূমিকা (Role During Disasters)

দুর্যোগের সময় স্বাস্থ্য সহকারীরা ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন এবং মহামারী প্রতিরোধে কাজ করেন।

৪.১ ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা (Relief and Medical Assistance)

দুর্যোগ কবলিত এলাকায় স্বাস্থ্য সহকারীরা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এছাড়া, রোগীদের জন্য ঔষধ সরবরাহ করেন।

বন্যার সময় স্বাস্থ্য সহকারীরা কিভাবে দুর্গত মানুষের কাছে খাবার, জল, ঔষধ পৌঁছে দিচ্ছেন, সেই দৃশ্য আমাদের প্রায়ই চোখে পড়ে।

৪.২ মহামারী প্রতিরোধ (Epidemic Prevention)

দুর্যোগের সময় রোগ ছড়িয়ে পড়া থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য সহকারীরা পরামর্শ দেন। তারা জীবাণুনাশক স্প্রে করেন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বলেন। এছাড়া, মহামারী সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন।

বন্যার সময় জলবাহিত রোগ (যেমন – ডায়রিয়া, কলেরা) থেকে বাঁচতে কি করতে হবে, সে বিষয়ে তারা বিস্তারিত জানান।

স্বাস্থ্য সহকারীরা আমাদের সমাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। তাদের কাজের মাধ্যমেই একটি সুস্থ সমাজ গড়া সম্ভব। স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিন। আপনার সুস্থতাই তাদের লক্ষ্য।