Skip to content
Home » Blog » পাইলস কি ভালো হয়? জানুন কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

পাইলস কি ভালো হয়? জানুন কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

পাইলস কি ভালো হয়? জানুন কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

আচ্ছা, ভাবুন তো, জীবনটা কেমন যেন একটু কঠিন হয়ে গেল, যখন সাধারণ কিছু কাজও অস্বস্তিকর মনে হয়? হ্যাঁ, আমি পাইলসের কথাই বলছি। এই রোগটা নিয়ে অনেকেই কথা বলতে চান না, কিন্তু সত্যি বলতে কি, এটা খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। তাই আজ আমরা পাইলস নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করব। পাইলস কি ভালো হয়? এর কারণগুলো কী, লক্ষণগুলোই বা কী কী, আর এর আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোই বা কেমন – সবকিছুই থাকবে আজকের আলোচনায়।

পাইলস, যা হেমোরয়েড নামেও পরিচিত, মলদ্বারের ভেতরে এবং বাইরের রক্তনালীগুলোর প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। এটা খুবই অস্বস্তিকর একটা অবস্থা, কিন্তু সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে, পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাহলে চলুন, দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত।

Table of Contents

পাইলস কী এবং কেন হয়?

পাইলস বা হেমোরয়েড হলো মলদ্বারের ভেতরের বা বাইরের রক্তনালীগুলোর ফোলা বা প্রদাহ। এই রোগটি নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় এবং সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। কিন্তু কেন হয় এই পাইলস? আসুন, কারণগুলো জেনে নেই:

পাইলসের কারণ

  • কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলসের প্রধান কারণ। মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দিতে হলে রক্তনালীগুলোর ওপর চাপ পড়ে এবং সেগুলো ফুলে যায়।
  • গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হওয়ার কারণে মলদ্বারের রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে মলদ্বারের রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে।
  • বংশগত কারণ: পরিবারের কারো যদি পাইলসের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনারও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: যারা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, তাদের পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ, বসে থাকার কারণে মলদ্বারের রক্তনালীতে চাপ পড়ে।
  • কম ফাইবারযুক্ত খাবার: খাবারে পর্যাপ্ত ফাইবার না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, যা পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।

পাইলসের লক্ষণগুলো কী কী?

পাইলসের লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি পাইলসে আক্রান্ত হয়েছেন। আসুন, সেই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

পাইলসের সাধারণ লক্ষণ

  • মলত্যাগের সময় রক্তপাত: এটা পাইলসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। মলের সাথে তাজা রক্ত দেখা যেতে পারে, যা সাধারণত ব্যথাহীন হয়।
  • মলদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি: মলদ্বারে ব্যথা, জ্বালা বা চুলকানি হতে পারে। বসার সময় বা মলত্যাগের সময় এই ব্যথা বাড়তে পারে।
  • মলদ্বারের চারপাশে ফোলা: মলদ্বারের চারপাশে ফোলা বা মাংসপিণ্ড অনুভব করা যায়। এটা সাধারণত বাইরের পাইলসের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
  • মলদ্বারে চুলকানি: পাইলসের কারণে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে, যা খুবই অস্বস্তিকর।
  • বারবার মলত্যাগেরurge: মনে হতে পারে যেন মলত্যাগ করার প্রয়োজন আছে, কিন্তু আসলে কিছুই হয় না।

পাইলস কি ভালো হয়? আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি

পাইলস কি ভালো হয়? হ্যাঁ, অবশ্যই ভালো হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে পাইলসের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যা রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা থেকে শুরু করে আধুনিক সার্জারি পর্যন্ত, পাইলসের চিকিৎসায় সবই সম্ভব।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন

  • ফাইবারযুক্ত খাবার: প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি এবং শস্য জাতীয় খাবার খান। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে মল নরম করতে সাহায্য করে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এটি মল নরম রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করলে হজম ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে না থাকা: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করুন। প্রতি ঘন্টায় কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন।

মেডিকেল চিকিৎসা

  • মলম ও সাপোজিটরি: বাজারে বিভিন্ন ধরনের মলম ও সাপোজিটরি পাওয়া যায়, যা পাইলসের ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
  • পেইন কিলার: ব্যথা বেশি হলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন-এর মতো পেইন কিলার ব্যবহার করা যেতে পারে।

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি

  • স্клеথেরাপি (Sclerotherapy): এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ দ্রবণ পাইলসের মধ্যে ইনজেক্ট করা হয়, যা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে দেয় এবং পাইলস ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যায়।
  • রাবার ব্যান্ড লিগেশন (Rubber Band Ligation): এটি একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি, যেখানে পাইলসের গোড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড পরানো হয়। এতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে পাইলস শুকিয়ে যায় এবং কয়েকদিনের মধ্যে পড়ে যায়।
  • ইনফ্রারেড কোয়াগুলেশন (Infrared Coagulation): এই পদ্ধতিতে ইনফ্রারেড আলো ব্যবহার করে পাইলসের রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করা হয়।
  • সার্জারি: জটিল ক্ষেত্রে সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। হেমোরয়েডেক্টমি (Hemorrhoidectomy) হলো পাইলসের সার্জিক্যাল অপসারণ।

পাইলস থেকে বাঁচতে ঘরোয়া প্রতিকার

পাইলস থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার বেশ কার্যকর হতে পারে। এগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অংশ করে নিলে পাইলসের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। আসুন, জেনে নেই সেই প্রতিকারগুলো:

ঘরোয়া প্রতিকার

  • অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরার জেল মলদ্বারের চারপাশে লাগালে জ্বালা ও ব্যথা কমে যায়। অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • বরফ: বরফের টুকরো কাপড় দিয়ে মুড়ে মলদ্বারে কিছুক্ষণ ধরে রাখলে ব্যথা ও ফোলা কমে যায়।
  • গরম জলের সেঁক: সিটজ বাথ (গরম জলের সেঁক) নিলে মলদ্বারের মাংসপেশি শিথিল হয় এবং ব্যথা কমে।
  • টি ট্রি অয়েল: টি ট্রি অয়েলের অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পাইলসের কারণে হওয়া চুলকানি ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

পাইলস ও ফিস্টুলা কি একই?

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, পাইলস ও ফিস্টুলা কি একই রোগ? উত্তর হলো, না। পাইলস হলো মলদ্বারের রক্তনালীগুলোর প্রদাহ, যেখানে ফিস্টুলা হলো মলদ্বারের ভেতরের নালী এবং বাইরের ত্বকের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক সংযোগ।

পাইলস ও ফিস্টুলার মধ্যে পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য পাইলস ফিস্টুলা
সংজ্ঞা মলদ্বারের রক্তনালীর প্রদাহ মলদ্বারের নালী ও ত্বকের মধ্যে অস্বাভাবিক সংযোগ
কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভাবস্থা, অতিরিক্ত ওজন সংক্রমণ, ফোড়া
লক্ষণ রক্তপাত, ব্যথা, ফোলা ব্যথা, ফোড়া, পুঁজ পড়া
চিকিৎসা জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ঔষধ, সার্জারি সার্জারি

পাইলস থেকে বাঁচতে খাদ্যাভ্যাস

খাদ্যাভ্যাস পাইলসের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক খাবার গ্রহণ করে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পারেন এবং পাইলসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারেন।

করণীয়

  • ফাইবারযুক্ত খাবার: প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করুন। ফল, সবজি, শস্য এবং মটরশুঁটি আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।
  • প্রচুর পানি পান: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
  • প্রোবায়োটিকস: দই এবং অন্যান্য প্রোবায়োটিক খাবার হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

বর্জনীয়

  • ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড: এই খাবারগুলোতে ফাইবার কম থাকে এবং হজম করা কঠিন।
  • অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার: এগুলো হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে।
  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন: এগুলো শরীরকে ডিহাইড্রেট করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে।

পাইলস চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি কতটুকু কার্যকর?

হোমিওপ্যাথি একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি, যা অনেকেই পাইলসের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কিছু মানুষ মনে করেন, হোমিওপ্যাথি পাইলসের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে, আবার কিছু মানুষ এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

  • উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা: হোমিওপ্যাথিতে রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ দেওয়া হয়।
  • প্রাকৃতিক উপাদান: হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি হয় এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম থাকে বলে মনে করা হয়।
  • ধৈর্য প্রয়োজন: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সময় লাগতে পারে এবং দ্রুত ফল পাওয়া নাও যেতে পারে।

পাইলস সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

পাইলস নিয়ে আমাদের চারপাশে অনেক প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনার অনেক দ্বিধা দূর করতে পারে:

পাইলস কি ছোঁয়াচে?

না, পাইলস ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি রক্তনালীর প্রদাহের কারণে হয় এবং একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায় না।

পাইলসের ব্যথা কখন বাড়ে?

পাইলসের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের সময়, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাড়ে।

পাইলসের জন্য কোন পরীক্ষা করা হয়?

পাইলস নির্ণয়ের জন্য সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা, যেমন – ডিজিটাল রেক্টাল পরীক্ষা (Digital Rectal Exam) করা হয়। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে সিগময়ডোস্কোপি (Sigmoidoscopy) বা কোলনোস্কোপি (Colonoscopy)-এর মতো পরীক্ষাও করা লাগতে পারে।

পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা কি সবসময় যথেষ্ট?

ছোটখাটো পাইলসের ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা যথেষ্ট হতে পারে, তবে জটিল ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

গর্ভাবস্থায় পাইলস হলে কি করা উচিত?

গর্ভাবস্থায় পাইলস হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত। ঘরোয়া প্রতিকার এবং ঔষধ দুটোই এক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।

পাইলস কি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়?

পাইলস সরাসরি ক্যান্সারের ঝুঁকি না বাড়ালেও, মলদ্বারে রক্তপাত হলে ক্যান্সার এবং পাইলসের মধ্যে পার্থক্য করা জরুরি। তাই, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষ কথা

পাইলস একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই, পাইলসের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করুন। সুস্থ জীবনযাপন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আপনি পাইলস থেকে মুক্তি পেতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে।

আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করেছে। যদি আপনার মনে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন!