Skip to content
Home » Blog » মুখের ঘা এর জন্য কোন ডাক্তার দেখাবেন? বিস্তারিত জানুন

মুখের ঘা এর জন্য কোন ডাক্তার দেখাবেন? বিস্তারিত জানুন

মুখের ঘা নিয়ে চিন্তিত? কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন, বুঝতে পারছেন না? বিস্তারিত জেনেনিন!

মুখে ঘা হওয়াটা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ছোট থেকে বড়, প্রায় সকলেই কখনও না কখনও এই সমস্যায় ভুগেছেন। কিন্তু মুখের ঘা যখন অসহ্য হয়ে ওঠে, তখন প্রশ্ন জাগে – মুখের ঘা এর জন্য কোন ডাক্তার দেখাবেন? (Mukher Gha Er Jonno Kon Doctor Dekhaben?)

আসলে, মুখের ঘা-এর কারণের উপরে নির্ভর করে ডাক্তার নির্বাচন করা উচিত। তাই, এই ব্লগ পোস্টে আমরা মুখের ঘা কেন হয়, এর প্রকারভেদ, কখন কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত এবং আরও অনেক জরুরি তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।

Table of Contents

মুখের ঘা কী এবং কেন হয়?

মুখের ঘা, যা স্টোমাটাইটিস বা ওরাল আলসার নামেও পরিচিত, মুখের ভেতরের নরম টিস্যুতে প্রদাহ বা ক্ষত সৃষ্টি করে। এটি গাল, জিভ, ঠোঁট বা তালুতে হতে পারে।

মুখের ঘা হওয়ার সাধারণ কারণগুলো:

  • ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
  • অপুষ্টি (ভিটামিন বি১২, ফোলেট, আয়রন, বা জিঙ্কের অভাব)
  • দাঁতের ধারালো অংশের কারণে আঘাত
  • অতিরিক্ত গরম বা মশলাযুক্ত খাবার
  • মানসিক চাপ
  • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • ধূমপান বা মদ্যপান

মুখের ঘা কত প্রকার?

মুখের ঘা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এবং প্রতিটি ধরনের জন্য আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে:

  • অ্যাপথাস আলসার (Canker Sores): ছোট, অগভীর ঘা যা সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।
  • ঠান্ডা ঘা (Cold Sores): হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের কারণে হওয়া ফোস্কা, যা অত্যন্ত সংক্রামক।
  • ক্যানডিডোসিস (Candidiasis): এটি একটি ছত্রাক সংক্রমণ, যা মুখ ও জিভে সাদা ছোপ সৃষ্টি করে।
  • লিউকোপ্লাকিয়া (Leukoplakia): মুখের ভিতরে সাদা বা ধূসর রঙের দাগ, যা ধূমপানের কারণে হতে পারে।

মুখের ঘা হলে কোন ডাক্তার দেখাবেন?

মুখের ঘা হলে আপনি নিম্নলিখিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন:

১. ডেন্টিস্ট (Dentist)

যদি আপনার মুখের ঘা দাঁত বা মাড়ির সমস্যার কারণে হয়ে থাকে, তাহলে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়াই ভালো।

  • করণীয়: দাঁতের ধারালো অংশ মসৃণ করা, দাঁতের সঠিক পরিচর্যা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া এবং সংক্রমণ কমাতে ওষুধ দেওয়া।
  • কখন যাবেন: দাঁতের কারণে ঘা হলে, মাড়িতে ব্যথা বা রক্ত পড়লে, অথবা দাঁত নড়বড়ে লাগলে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।

২. ইএনটি বিশেষজ্ঞ (নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ) (ENT Specialist)

মুখের ঘা যদি নাক, কান বা গলার কোনো সমস্যার কারণে হয়, তাহলে একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • করণীয়: সংক্রমণ নির্ণয় করা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া। প্রয়োজনে, বায়োপসি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
  • কখন যাবেন: যদি ঘা না সারে, কথা বলতে বা গিলতে অসুবিধা হয়, বা গলার গ্রন্থি ফুলে যায়, তাহলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।

৩. মেডিসিন বিশেষজ্ঞ (Medicine Specialist)

কিছু ক্ষেত্রে, মুখের ঘা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

  • করণীয়: রোগ নির্ণয় করার জন্য রক্ত পরীক্ষা বা অন্যান্য পরীক্ষা করাতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে পারেন।
  • কখন যাবেন: যদি ঘা দীর্ঘদিন ধরে থাকে, জ্বর, দুর্বলতা বা শরীরের অন্য কোনো অংশে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞ বাছাই করার জন্য একটি সহায়ক তালিকা

সমস্যা কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন?
দাঁত বা মাড়ির কারণে ঘা ডেন্টিস্ট
নাক, কান, গলার সমস্যার কারণে ঘা ইএনটি বিশেষজ্ঞ
শারীরিক দুর্বলতা বা অন্য কোনো রোগের লক্ষণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

মুখের ঘা এর কারণ নির্ণয়

সঠিক চিকিৎসার জন্য, মুখের ঘায়ের কারণ নির্ণয় করা জরুরি। এক্ষেত্রে ডাক্তার নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন:

  • শারীরিক পরীক্ষা: ডাক্তার আপনার মুখ ও গলার ভেতর ভালোভাবে পরীক্ষা করবেন।
  • মেডিক্যাল ইতিহাস: আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পূর্ববর্তী তথ্য জানতে চাইবেন।
  • বায়োপসি: যদি ঘা গুরুতর হয়, তাহলে ডাক্তার আক্রান্ত স্থান থেকে কোষ নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারেন।
  • রক্ত পরীক্ষা: কিছু ক্ষেত্রে, সংক্রমণ বা ভিটামিনের অভাব জানতে রক্ত পরীক্ষা করা হতে পারে।

মুখের ঘায়ের চিকিৎসা

চিকিৎসা সাধারণত ঘায়ের কারণ এবং প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ওষুধ: অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সংক্রমণ কমাতে ব্যবহার করা হয়। ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • মাউথওয়াশ: অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে মুখের ঘা পরিষ্কার থাকে এবং সংক্রমণ কমে যায়।
  • জীবনযাত্রার পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং মানসিক চাপ কমানো জরুরি।

মুখের ঘা থেকে বাঁচতে কিছু টিপস

কিছু সাধারণ অভ্যাস আপনাকে মুখের ঘা থেকে রক্ষা করতে পারে:

  • নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা ও ফ্লস ব্যবহার করা।
  • অতিরিক্ত গরম বা মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করা।
  • ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।
  • মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা।
  • ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

কখন জরুরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?

যদিও বেশিরভাগ মুখের ঘা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • ঘা যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে।
  • ঘা যদি খুব বেদনাদায়ক হয় এবং খাবার খেতে বা কথা বলতে অসুবিধা হয়।
  • যদি জ্বর, দুর্বলতা বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়।
  • যদি ঘা বারবার ফিরে আসে।

মুখের ঘা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQs)

আপনার মনে হয়তো আরও কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই, নিচে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:

১. মুখের ঘা কি ছোঁয়াচে?

সব ধরনের মুখের ঘা ছোঁয়াচে নয়। যেমন, অ্যাপথাস আলসার ছোঁয়াচে নয়। কিন্তু ঠান্ডা ঘা (Cold Sores) বা ক্যানডিডোসিসের মতো সংক্রমণ ছোঁয়াচে হতে পারে।

২. মুখের ঘা হলে কি খাবার গিলতে অসুবিধা হয়?

কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যখন ঘা বড় হয় বা গলার কাছে থাকে, তখন খাবার গিলতে অসুবিধা হতে পারে।

৩. মুখের ঘা কি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে?

খুব কম ক্ষেত্রেই মুখের ঘা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। তবে, যদি ঘা দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪. কোন ভিটামিনের অভাবে মুখের ঘা হয়?

ভিটামিন বি১২, ফোলেট, আয়রন ও জিঙ্কের অভাবে মুখের ঘা হতে পারে।

৫. মুখের ঘায়ের ঘরোয়া চিকিৎসা কি আছে?

হ্যাঁ, কিছু ঘরোয়া উপায় মুখের ঘায়ের উপশম করতে পারে, যেমন লবণ জল দিয়ে মুখ ধোয়া, মধু লাগানো বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা। তবে, ঘরোয়া চিকিৎসা সবসময় ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়।

৬. बच्चों में मुंह के छाले होने पर क्या करें?

বাচ্চাদের মুখের ঘা হলে, তাদের নরম ও ঠান্ডা খাবার দিন। মধু বা গ্লিসারিন লাগাতে পারেন। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৭. জিভের ঘায়ের জন্য কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?

জিভের ঘায়ের জন্য ডেন্টিস্ট অথবা ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। তারা আপনার অবস্থা মূল্যায়ন করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।

৮. ঘা না সারলে কী করতে হবে?

যদি মুখের ঘা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে এবং কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৯. মুখের ঘা এর ঘরোয়া প্রতিকার কি কি?

মুখের ঘায়ের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার হলো:

  • লবণ জল দিয়ে মুখ ধোয়া
  • মধু লাগানো
  • অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা
  • নারকেল তেল লাগানো
  • বেকিং সোডা ব্যবহার করা

১০. মুখের ঘা চুষলে কি হয়?

মুখের ঘা চুষলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে এবং ঘা আরও খারাপ হতে পারে। তাই, এটি পরিহার করা উচিত।

শেষ কথা

আশা করি, মুখের ঘা নিয়ে আপনার মনে যে প্রশ্নগুলো ছিল, তার উত্তর দিতে পেরেছি। মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে সঠিক ডাক্তারের পরামর্শ নিলে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাই, আর দেরি না করে, আজই আপনার সমস্যার জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন! সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।